পশ্চিমবঙ্গে এই
মুহূর্তে পাঁচ খানা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তড়িঘড়ি তৈরি করার জন্য আদেশ দিয়েছে রাজ্য
সরকারে। হাতে সর্বসাকুল্যে সময়ে রয়েছে মাত্র একবছর। কৃষি প্রধান রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ
খাদ্য শস্যের ভান্ডার আর তথ্য তো অন্তত সেটাই বলে। আর এটাকে ক্যাশ করে বহু দশক ধরে বাম রাজত্ব চালিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের দাবি এবং শ্রমিকদের দাবি এটাই ছিল পশ্চিমবঙ্গের
রাজনৈতিক তর্জা। কিন্তু সময় কারো জন্য থেমে থাকে না সময় পাল্টাছে এবং তার সাথে মানুষের
চিন্তা-ভাবনা পাল্টাচ্ছে। অনেক কৃষকই অনেক ক্ষেত্রে চায় না যে তার পরের প্রজন্ম এই
একই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকুক। ফলতো বাজারে তৈরি হচ্ছে নতুন চাহিদা।
এইরকম একটি সময়ে সিংহাসনে বসলেন তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সময়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একবার বলেছিলেন 'কৃষি আমাদের বর্তমান এবং শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ' তাই শিল্প গড়ে তুলতে হবে। হ্যাঁ তৎকালীন রাজ্য সরকার শিল্প করার গড়ার জন্য উদ্যত হল। টাটাকে জমি চিহ্নিত করতে বলা হলো সিঙ্গুরের জমি চিহ্নিত করা হলো, কিন্তু যখন কারখানা প্রায় অর্ধেক হয়ে এসেছে তখন কিছু কৃষকদের দাবি দাওয়া আসে যে তাদের দাবি-দাওয়া মেটানোই হয়নি। যে রাজনৈতিক দল কৃষকদের এত প্রাধান্য দেয় তাদের এই নতুন নীতিকে অনেকেই সে সময় মেনে নিতে পারেনি। সে সময়ে কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়ালেন এবং কৃষকদের হয়ে কথা বললেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুরে তৈরি হলো ব্যাপক আন্দোলন। সময় গড়াতে গড়াতে 2011 পালাবদল। বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রথম দিক থেকে তার রাজনৈতিক দলের অনেকেই মন্তব্য ছিল আমরা কৃষি প্রধান দল। আমরা কৃষক এবং শ্রমিকদের কথা বলব। ঠিক একই রকমভাবে যেমন বামেরা আগে বলতেন। সময় আরও এগোচ্ছে আমরা আরও উন্নত হচ্ছি এবার ধীরে ধীরে চাকরির এর চাহিদা বাড়ছে। ইন্ডাস্ট্রি চাইছে মানুষ। অন্যান্য রাজ্যকে দেখে এবং তাদের উন্নতি দেখে ফুলেফেঁপে উঠছে মানুষের ইমোশন। এবার যাই হোক না কেন রাজ্যের শিল্প দরকার, বহু রাজনৈতিক সংঘাত এবং টানাপোড়েনের পর অবশেষে কলকাতায় এসে পৌঁছেছে Infosys, এছাড়া TCS, Tech Mahindra মতো সংস্থাতো ইতিমধ্যেই কলকাতায় রয়েছে। কোন রাজনৈতিক দল থাকাকালীন সময়ে তারা এসেছে সেটা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আমাদের আলোচ্য বিষয় পশ্চিমবঙ্গে এরা আছে এবং এরা আরও বড় হোক। না এখানেই শেষ নয় এই রকম আরো সংস্থা এসে পৌঁছক এটাই আমাদের দাবি।
আরও পড়ুন:চালাকি করে হ্যাঁ বলাতে শেখো, মার্কেটিং এর আসল রহস্য !
তাহলে দেখি এবার এই গোটা বিষয়টাকে সামাল দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে নতুন কি পদক্ষেপ নেওয়া হল। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি তথ্য বলছে " দু'বছর পর বিশ্ব-বঙ্গ বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে রাজ্যে। অতিমারির কারণে 2020 আর 2021 সালে পশ্চিমবঙ্গে এই বাণিজ্য সম্মেলন করা একেবারেই সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবছরের সম্মেলনের দারায় গত দু'বছরের ঘাটতি পূরণ করতে চাইছে রাজ্য সরকার। আর এবার বাংলায় বিনিয়োগ টানতে উদ্যোগী হয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই ফলস্বরূপ রাজ্যের পাঁচটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ার কাজে গতি আনতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই লক্ষ্যে বাণিজ্য সম্মেলনের আগেই রাজ্যের পাঁচটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে হাত দিতে চায় রাজ্য সরকার। এ বিষয়ে বলে রাখা ভালো যে সম্প্রতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এম্পাওয়ার্মেন্ট কমিটির বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেখানেই তিনি এ বিষয়ে জোর দিতে বলেছেন রাজ্যের প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের। তারপরেই দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প নিগম। পাঁচটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের মধ্যে তিনটে হবে দক্ষিণবঙ্গে এবং দুইটি হবে উত্তরবঙ্গে এই তালিকায় নাম রয়েছে সিঙ্গুরেরো। সিঙ্গুরে তৈরি হবে কৃষিনির্ভর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এছাড়াও আরও পাঁচটি প্রস্তাবিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে হাত দিতে চাইছে তারা। বলা ভালো যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সিঙ্গুর ছাড়া আরও পাঁচটি প্রস্তাবিত পার্টগুলো হল বোলপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, বাঁকুড়া গঙ্গাজলঘাটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, আলিপুরদুয়ারের ইথেলবারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক আর রয়েছে জয়গাও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। ইতিমধ্যে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজের জন্য টেন্ডার ডেকেছে রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্প নিগম। লক্ষ রয়েছে এক বছরের মধ্যে পাঁচটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে। এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গুলো দেখিয়েই বিজনেস টানার লক্ষ্য হবে মুখ্যমন্ত্রীর। এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কগুলিতে প্রথমত পাঁচিল তৈরি করা দিয়ে শুরু হবে কাজ।
আর এটাই এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গুলি নির্মাণের প্রাথমিক কাজ, তৈরি হবে প্রশাসনিক কার্যালয়, রাস্তা ও জল সরবরাহের পরিকাঠামো। রাজ্যের এক আধিকারিকের দাবি এই শিল্প পার্ক গুলি গড়ে উঠলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। অন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এর সঙ্গে সিঙ্গুরের পার্কের কিছুটা হলেও পার্থক্য থাকবে বলে জানা গিয়েছে। মোট 11.8 একর জমির ওপর গড়ে উঠছে সিঙ্গুরের এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এখানে মূলত গড়ে উঠবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প। এই খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে যে একটা পার্ক তৈরি হবে। সেখানে সিঙ্গুরের কৃষকদের উৎপাদিত সবজি ফল ও অন্যান্য ফসল সেখানে বিক্রি করা হবে। ফলে একদিকে যেমন কৃষকরা নিজের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির সুযোগ পাবেন তেমনি অন্যদিকে শিল্পক্ষেত্র কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের এক আধিকারিক। হ্যাঁ পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে আরো বড় ইন্ডাস্ট্রির দরকার। কোন বড় প্লেয়ার হয়তো আগামী দিনে আগ্রহ দেখাতেও পারে। কিন্তু আমাদেরকে পজিটিভ থাকতে হবে। এখন যেটা হচ্ছে না তাই বলে যে কাল হবে না সেটা কোথাও বলা নেই। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আশা আর তার সাথে প্রত্যাশা পাথরের মধ্যেও প্রাণের সঞ্চার ঘটাতে পারে। সেই আশা নিয়ে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি। আপনার মতামত জানান কমেন্ট বক্সে।
আরও পড়ুন: Mutual Fund কি? আমাদের কী Share Market Investment করা উচিত?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন